মেছতা: ত্বকের জেদি কালচে দাগ, কারণ ও সমাধান
ত্বকের উজ্জ্বলতা হঠাৎ যেন হারিয়ে যাচ্ছে। গালের দুই পাশে বা কপালের ওপরে হালকা বাদামি ছোপ ছোপ দাগ—সমস্যাটি অনেকের কাছেই পরিচিত। এই সমস্যার নামই হলো মেছতা (Melasma)। এটি ত্বকের এক ধরনের পিগমেন্টেশন সমস্যা, যা দেখতে অনেকটা ছায়ার মতো, কিন্তু সময়ের সাথে আরও গাঢ় হয়ে ওঠে।
মেছতা কেন হয়?
মেছতা হওয়ার পেছনে মূলত তিনটি বড় কারণ রয়েছে:
🔹 সূর্যের রশ্মি (UV Exposure): অতিরিক্ত রোদে ঘোরাঘুরি করলে ত্বকে মেলানিনের উৎপাদন বেড়ে যায়, ফলে ত্বক নির্দিষ্ট জায়গায় বেশি কালো হয়ে যায়।
🔹 হরমোনের পরিবর্তন: বিশেষ করে গর্ভাবস্থা, জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খাওয়া, থাইরয়েড সমস্যার কারণে অনেক নারীর মুখে হঠাৎ মেছতা দেখা দেয়।
🔹 জিনগত প্রভাব: পরিবারের কারও আগে যদি মেছতা থেকে থাকে, তাহলে অন্য সদস্যের মধ্যেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মেছতা কি একদিনে ভালো হয়?
দুঃখজনক হলেও সত্যি, মেছতা হঠাৎ করে যেমন আসে না, তেমনি হঠাৎ করে যায়ও না। এটা এক ধরনের দীর্ঘমেয়াদী স্কিন কন্ডিশন, যা নিয়ন্ত্রণে আনতে ধৈর্য ও নিয়মিত যত্ন লাগে। কিন্তু সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে মেছতা অনেকটাই হালকা করা সম্ভব।
মেছতার যত্ন কিভাবে নিবেন?
১. সানস্ক্রিন হলো সবচেয়ে বড় অস্ত্র:
প্রতিদিন বাইরে যাওয়ার আগে SPF ৫০+ Broad Spectrum Sunscreen ব্যবহার করুন। মেঘলা দিনেও সানস্ক্রিন লাগানো জরুরি, কারণ UV রশ্মি তখনও থাকে।
2. সক্রিয় উপাদানযুক্ত সিরাম বা ক্রিম ব্যবহার করুন:
মেছতা হালকা করতে কিছু বিশেষ উপাদান বেশ কার্যকর:
নিয়াসিনামাইড (Niacinamide)
আলফা আরবুটিন (Alpha Arbutin)
ভিটামিন সি (Vitamin C)
কোজিক অ্যাসিড (Kojic Acid)
ট্রানেক্সামিক অ্যাসিড (Tranexamic Acid)
এ ধরনের উপাদানযুক্ত প্রোডাক্ট প্রতিদিন সকালে বা রাতে ব্যবহারে পিগমেন্টেশন হালকা হয়।
3. হার্শ এক্সফোলিয়েশন বা ব্লিচ এড়িয়ে চলুন:
অনেকে দ্রুত ফল পাওয়ার আশায় ঘন ঘন স্ক্রাব বা ব্লিচ ব্যবহার করেন, যা ত্বকে আরও ক্ষতি করে। বরং জেন্টল ক্লিনজার, হাইড্রেটিং সিরাম ও সানস্ক্রিন এই তিনটি নিয়মিত ব্যবহার করাই যথেষ্ট।
4. রাতের যত্নে রেটিনয়েড যুক্ত প্রোডাক্ট:
ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শে আপনি রেটিনল বা রেটিনয়েড সিরাম ব্যবহার করতে পারেন, যা স্কিন টার্নওভার বাড়িয়ে কালো দাগ হালকা করে।
মেছতা প্রতিরোধে কী করবেন?
✅ দুপুর ১২টা থেকে ৩টার মধ্যে সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলুন
✅ ছাতা, টুপির ব্যবহার করুন
✅ প্রতিদিন অন্তত ২ বার সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন
✅ পর্যাপ্ত পানি পান করুন ও ত্বক হাইড্রেট রাখুন
✅ ঘুম ও হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখুন
—
শেষ কথা
মেছতা হলো ত্বকের এক জেদি শত্রু, কিন্তু যত্নের মাধ্যমে সেটাকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। শুধু প্রয়োজন সঠিক প্রোডাক্ট, নিয়মিত স্কিনকেয়ার রুটিন এবং ধৈর্য। মনে রাখবেন, “আপনার ত্বক আপনার পরিচয়, তাকে যত্ন দিন ভালোবাসা দিয়ে।”