ত্বকের পর্যাপ্ত যত্ন নেওয়া নিয়ে প্রায় সময় আমরা চিন্তা এবং উদ্বেগের মধ্যে থাকি। বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলের জন্যই ত্বকের যত্ন নেওয়া এবং ত্বকের সমস্যা এড়িয়ে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে স্কিন কেয়ার সম্পর্কিত প্রচুর তথ্য ইন্টারনেটে সহজেই পাওয়া যায়। এক সময় ছিল যখন আমরা দেখতাম আমাদের নানী-দাদীরা ঘরোয়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপকরণ এর মাধ্যমে নিজেদের রূপচর্চা করতেন।
আলু, শসা, গাজর এমন নানাবিধ সবজি এবং ফলের সংমিশ্রণে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক ফেসপ্যাক বানিয়ে ত্বকের যত্ন নিতেন। এতে পারতো পক্ষে কোন ক্ষতি না হলেও নিজের স্কিন টাইপ না জানার কারণে সঠিক স্কিন কেয়ার করা সম্ভব হত না। ফলে কম বয়সে ব্রণ এবং বলি রেখার সমস্যায় ভুগতে হতো। বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের আশীর্বাদে মানুষ নিজের ত্বকের ধরন এবং ত্বকের যত্ন সম্পর্কে অনেকটাই সচেতন হয়েছেন। শুধুমাত্র ঘরোয়া উপকরণে নয় বরং নিজের স্কিনটাইপ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে বিভিন্ন কেমিক্যাল উপাদানের মাধ্যমেও সঠিক স্কিন কেয়ার করা সম্ভব।
সাধারণ মানুষের স্কিন কেয়ারের প্রতি সচেতনতার সাথে সাথে বাজারে বিভিন্ন স্কিন কেয়ার পণ্যের চাহিদা ও বিপুলসংখ্যক বেড়েছে। এক সময় যে কেমিক্যাল পণ্যগুলো শুধুমাত্র ডাক্তার পর্যন্ত সীমিত ছিল তা এখন চিকিৎসকদের পরামর্শে খোলামেলাভাবে বাজারে ও অনলাইনে ও বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল নায়াসিনামাইড, হ্যালুয়ারনিক এসিড, স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, রেটিনল প্রমুখ ।

রেটিনল কী?
রেটিনল ভিটামিন এ এবং চর্বি দ্রবণীয় উপাদানের সংমিশ্রণে তৈরি একটি খুবই কার্যকরী স্কিন কেয়ার পণ্য। এটি অনেক সময় খাদ্যাভ্যাসে সাপ্লিমেন্ট হিসেবেও গ্রহণ করা হয়। প্রাকৃতিকভাবে গাজর ডিম, মিষ্টি আলু এবং বিভিন্ন দুগ্ধ জাতীয় পণ্যে এটির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। রেটিনল সাধারণত ত্বকের বলিরেখা দূর করে, ত্বককে মসৃণ করে ও দাগ ছোপ দূর করতে সাহায্য করে। বয়স ও ত্বকের ধরন অনুযায়ী রেটিনলের মাত্রার তারতম্য হতে পারে। তাই এ ধরনের রাসায়নিক উপাদান ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আমানডা হ্যাগেন, ট্রেনডের একজন সার্টিফাইড এস্থিশিয়ান রেটিনল সম্পর্কে বলেন, “ত্বকের যত্নে রেটিনল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ এটি বয়স্ক কোষের সংখ্যা কমিয়ে ত্বককে আরো উজ্জীবিত করে এবং ত্বকের যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের টেক্সচারকে মসৃণ ও পরিমার্জিত করে। এছাড়া রেটিনল ত্বক উজ্জ্বল করে ও ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ কমাতে সাহায্য করে।”
রেটিনল কত প্রকার ও কি কি?
রেটিনল বেশ অনেক প্রকারের হতে পারে তার মধ্যে ছয় প্রকারের রেটিনল স্কিন কেয়ার এর জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সর্বপ্রথমে রয়েছে রেটিনাইট পালমিটেড। এটি প্রায় সব ধরনের রেটিনল সিরামে পাওয়া যায় এবং রেটিনয়েড পণ্যের মধ্যে এটি সবচেয়ে মাইল্ড ফর্ম। এরপরেই রয়েছে ভিটামিন এ১ যা স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে বিপুলভাবে ব্যবহৃত হয়।
এটি কোলাজেন প্রোডাকশনে এবং বলিরেখা দূর করতে অধিক কার্যকারী। রেটিনালডিহাইড ভিটামিন এ১ এর চেয়ে বেশি শক্তিশালী তবে ট্রিটিনয়নের চেয়ে কম শক্তিশালী । এটি রেটিনয়েক এসিডে রূপান্তরিত করে তাপ পরিচর্যায় ব্যবহৃত করা হয়। ট্রিটিনয়ন আরেকটি শক্তিশালী উপাদান যা ত্বকে সরাসরি রেটিনেয়ক অ্যাসিডে রূপান্তরিত হয়ে যায়।
তবে ত্বকের ধরনভেদে এর ব্যবহারে ত্বক জ্বালাপোড়া করতে পারে। তাই অবশ্যই একজন ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শে এই উপাদানটি ব্যবহার করা উচিত। এডাপিলিন সাধারণত ব্রনের দাগ এবং ত্বকে ব্রণ হওয়া থেকে রক্ষা করে। ত্বকে নতুন কোষ উৎপাদনেও এই উপাদানটি ভালো কাজ করে থাকে। টাজারোটিন একটি প্রেসক্রাইবড রেটিনলের প্রকার যা মুখের ব্রণ ও সরিয়াসিস নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি সবচেয়ে শক্তিশালী রেটিনল উপাদান এবং এর কারণে ত্বকে জ্বালাপোড়াও হতে পারে তাই এই উপাদানটিও কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শেই ত্বকে লাগানো উচিত।
রেটিনল ব্যবহারের বয়সসীমা

ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে রেটিনল সাধারণত নারী-পুরুষ ভেদে যেকোনো বয়স সীমায় ব্যবহার করা যায় তবে নির্দিষ্ট স্কিনটাইপ ও ত্বক কতটুকু সংবেদনশীল তার উপর ভিত্তি করে রেটিনল ব্যবহার করা উচিত। শিশুদের ত্বক কোমল ও পাতলা থাকায় রেটিনল অনেক সময় তাদের ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।
আবার টিনেজ বয়সে বিভিন্ন হরমোনাল ডেভেলপমেন্টের কারণে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। তাই ২০ বছরের উপরে, বিশেষজ্ঞরা রেটিনল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যদিও ২০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই ত্বকে একটি যৌবনতার ছাপ থাকে। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে এই বয়সে স্কিন কেয়ার রুটিনে ভালো ক্লিনজার, ময়েশ্চারাইজার ও সানস্ক্রিম থাকাই যথেষ্ট। তবে কারো যদি সাধারণের চেয়ে জলদি চেহারায় বলিরেখা দেখা দিতে শুরু করে তাহলে সার্টিফাইড ডারমাটোলজিস্টের পরামর্শে পরিমাণ মতো রেটিনল ব্যবহার করা যেতে পার।
ত্রিশের পরে চেহারায় হালকা বলিরেখা দেখা দিতে শুরু করে। তাই এ সময় চেহারায় যৌবনতা ধরে রাখতে নিম্ন থেকে মাঝারি ঘনত্বের রেটিনল ব্যবহার করা যেতে পারে। চল্লিশের উর্ধ্বে ত্বকের কোলাজেন প্রোডাকশন মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে আসে। ফলে মুখে বয়সের ছাপ আরো ভালোভাবে বুঝা যায়। এ সময় একটু উচ্চ মাত্রার রেটিনল ব্যবহার করা উত্তম। মনে রাখতে হবে রেটিনল এক এক স্ক্রিন টাইপে এক এক রকম ভাবে আচরণ করে। তাই যে বয়সে শুরু করা হোক না কেন প্রাথমিকভাবে নিম্ন ঘনত্বের রেটিনল ব্যবহার করা উচিত। স্কিন যখন নিম্ন ঘনত্বের রেটিনলে অভ্যস্ত হয়ে আসবে তখন ধীরে ধীরে উচ্চমাত্রার রেটিনলে সুইচ করা যেতে পারে।
স্কিন টাইপ এবং রেটিনল
রেটিনল যে কোন স্কিন টাইপের জন্যই অত্যন্ত উপকারী। বিশেষত বার্ধক্য জনিত স্কিনে এর গুরুত্ব অসীম। একনে প্রোণ স্কিনের জন্য ও রেটিনল মারাত্মক উপকারী। এর মধ্যে এক্সফোলিয়েটিং এজেন্ট থাকে যা ত্বকের হোয়াইটহেড এবং ব্ল্যাকহেডকে দূর করে এবং ত্বককে করে ব্রণ মুক্ত। তৈলাক্ত এবং শুষ্ক উভয় স্কিন টাইপে রেটিনল ভাল কাজ করে।
এটি অয়েলি স্কিনে অয়েল প্রোডাকশন নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসতে সাহায্য করে। অপরদিকে শুষ্ক স্কিনকে রেটিনল হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে। যদিও যে কোন ত্বকেই রেটিনল ব্যবহার করা যেতে পারে তারপরও ত্বকের সংবেদনশীলতার উপর ভিত্তি করে সতর্কতার সাথে এটি প্রয়োগ করা উচিত। কেননা ত্বক ভেদে রেটিনল নেতিবাচক বিক্রিয়া করে অবাঞ্চিত ফুসকুড়ি (rash) সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বককে আরো বেশি শুষ্ক করে ফেলতে পারে।
রেটিনল ব্যবহারের নিয়ম
ত্বকে রেটিনল ব্যবহারের পূর্বে ত্বকের ছোট্ট অংশে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করে নিতে হবে। ২৪ ঘন্টা পর যদি ত্বকে কোন প্রকার জ্বালা অনুভব না হয় তাহলে বুঝতে হবে রেটিনল আপনার ত্বকে সুট করেছে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শে নিজের স্কিনটাইপ অনুযায়ী রেটিনলের ঘনত্ব বেছে নিতে হবে। যদি প্রথমবার হয়ে থাকে তাহলে নিম্ন মাত্রার ঘনত্বের (০.২৫% অথবা ০.৫%) রেটিনল ব্যবহার করা উত্তম।
রেটিনল প্রয়োগ করার পূর্বে ক্লিনজারের সাহায্যে ত্বকে অতিরিক্ত মেকআপ এবং ময়লা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। ত্বককে একটি পরিষ্কার টাওয়েলের মাধ্যমে ভালোভাবে মুছে তারপর রেটিনল এপ্লাই করতে হবে যেন আপনার ত্বক এটিকে ভালোভাবে শোষণ করতে পারে। খুবই অল্প পরিমাণ রেটিনল নিয়ে কপালে, গালে এবং থুতনিতে ডট আকারে লাগাতে হবে।চোখের অংশ এবং ত্বকের সংবেদনশীল জায়গাগুলো বাদে আলতোভাবে উপাদানটি সারা মুখে মেখে নিতে হবে।
রেটিনল ত্বকে এবজর্ব হতে কিছুটা সময় নেয়। তাই স্কিন পুরোপুরি ড্রাই না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সম্পূর্ণভাবে শুকিয়ে গেলে ত্বকে মশ্চারাইজার লাগাতে হবে। যদি দিনের বেলা হয় তাহলে কমপক্ষে SPF 30 যুক্ত সানস্ক্রিন মাখতে হবে যেন সূর্যের আলোর সঙ্গে বিক্রিয়া করে এটি ত্বকে কোন ক্ষতি না করে। বিশেষজ্ঞদের মতে শুরুতে রেটিনল সপ্তাহে একদিন বা দুদিন ব্যবহার করা যেতে পারে। ধীরে ধীরে এর ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে।
রেটিনলের সাথে কি কি প্রোডাক্ট ইউজ করা যাবে এবং কি কি প্রোডাক্ট ইউজ করা যাবে না

রেটিনল স্কিনের জন্য একটি চমৎকার স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট হলেও নির্দিষ্ট কিছু প্রোডাক্ট এর সাথে এটি ব্যবহার করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। যেমন রেটিনল যদি বেঞ্জয়েল পারঅক্সাইডের সাথে ব্যবহৃত করা হয় তাহলে ত্বকে অতিরিক্ত শুষ্কতা এবং জ্বালাপোড়া অনুভব হতে পারে। বেঞ্জয়েল পারঅক্সাইডের মত স্যালিসাইলিক এসিডের সাথে এই উপাদানটি ব্যবহার করলেও ত্বকে জ্বালা পোড়া অনুভব হতে পারে।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ কোন স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট রেটিনলের সাথে ইউজ করলেও ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। আলফা হাইড্রোক্সি এসিড এবং বিটা হাইড্রোক্সি এসিড রেটিনলের সাথে ব্যবহার করলে ত্বকের সংবেদনশীলতা বাড়তে পারে এবং অধিক জ্বালাপোড়া অনুভব হতে পারে। এই আইটেম গুলো আলাদা আলাদা ভাবে স্কিন কেয়ার রুটিনে যুক্ত করা যেতে পারে।তবে একসাথে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা শ্রেয়।
কিছু স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট আছে যেগুলো রেটিনলের সাথে যুক্ত করলে অল্প সময়ে আরো ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। রেটিনল মাঝে মাঝে স্কিনকে অতিরিক্ত শুষ্ক করে ফেলতে পারে। তাই এর রাসায়নিক দ্রব্যটি ব্যবহার করার পর মশ্চারাইজার লাগালে ত্বকের আর্দ্রতা আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসে। দিনের বেলা যদি রেটিনল ব্যবহার করা হয় তাহলে সাথে সানস্ক্রিম ব্যবহার করা খুবই জরুরী। কেননা সানস্ক্রিন শুধু ত্বককে ক্ষতিকারক UV রশ্মি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে না বরং রেটিনলকে
ত্বকে আরো ভালোভাবে এবজর্ব করতে সাহায্য করে। রেটিনল ব্যবহার করার পূর্বে একটি ভালো হাইড্রেটিং ক্লিনজার ব্যবহার করলেও ত্বক আরো মসৃণ ও সতেজ হয়। রেটিনলের সঙ্গে হ্যালুয়ারনিক এসিড ও একটি ভালো কম্বিনেশন কেননা এই এসিডটিও ত্বককে হাইড্রেট রাখতে সহায়তা করে।
রেটিনলের উপকারিতা

রেটিনল, ভিটামিন এ এর একটি ডিরাইভেটিভ যা ত্বকের অসংখ্য উপকারিতার জন্য বিখ্যাত এবং প্রশংসনীয়। এই উপাদানটি এর অ্যান্টি এজিং বৈশিষ্ট্যের জন্য খুবই জনপ্রিয়।কোলাজেন ত্বকের ইলাস্টিসিটি ধরে রাখার জন্য এবং চামড়া ঝুলে পড়া থেকে রোধ করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।
রেটিনল কোলাজেন প্রোডাকশন বৃদ্ধি করে, ত্বকের ইলাস্টিসিটি রক্ষা করে ফলে চেহারার সূক্ষ্ম লাইন এবং বলিরেখা কমে যায় এবং ত্বক আরো সজীব ও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। রেটিনল ত্বকের মৃত এবং পুরাতন কোষ কে নষ্ট করে ফেলে ফলে নতুন কোষ সৃষ্টি হয় যা ত্বককে আরো মসৃণ এবং সুন্দর করে তোলে। এর রাসায়নিক উপাদানটি স্কিন টেক্সচার সঠিক করে এবং স্কিনকে আরো কোমল এবং মসৃণ করে তোলে। এটি ত্বকের পোর (গর্ত) কমাতে সাহায্য করে।
রেটিনল মুখের ব্রণ কমাতেও খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। এটি ত্বকে ইনফ্লামেশন কমায় এবং ত্বককে স্কিন ব্রেক আউট হওয়া থেকে রক্ষা করে। এটি হাইপার পিগমেন্টেশন, ডার্ক স্পট ও সান ডেমেজ কমাতে সাহায্য করে যার ফলে স্কিনটোন আরো মসৃণ হয়ে ওঠে। এটি মেলানিন প্রোডাকশন ও বাড়িয়ে তোলে যা ত্বককে আরো উজ্জ্বল করতে সহায়তা কর।
রেটিনলের ফটোপ্রোটেকটিভ বৈশিষ্ট্য আছে যা ত্বককে ক্ষতিকারক UV রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। যদিও এটি সানস্ক্রিমের কোন বিকল্প নয় তারপরও সানস্ক্রিমের সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবহার করলে এর ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। রেটিনল কেরাটোসিস পিলারিজ নামের একটি চর্ম রোগ যার কারণে মুখে ছোট ছোট লাল বর্ণের দানা সৃষ্টি হয়, তার বিরুদ্ধে ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
রেটিনলের অপকারিতা
বিশ্বের সব উপাদানেরই যেমন দোষ ত্রুটি আছে তেমন রেটিনলেরও উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও আছে। রেটিনল ত্বককে প্রয়োজনের বেশি শুষ্ক করে তুলতে পারে ফলে ত্বক ফ্লেকি হয়ে ওঠে এবং চামড়াও উঠতে পারে। এ পর্যায়ে একটি ভালো হাইড্রেটিং মশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বক আবারো পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। কেউ কেউ রেটিনল ব্যবহারের ফলে ত্বকে হালকা জ্বালাপোড়া এবং লাল ভাব লক্ষ্য করতে পারেন।
যদি প্রথম দিকেই খুব উচ্চমাত্রার ঘনত্বের রেটিনল ব্যবহার করা হয় সে ক্ষেত্রে এমন উপদ্রব দেখা দেয়। অনেক সময় অতিরিক্ত রেটিনল ব্যবহার করার ফলে স্কিন সূর্যের আলোর প্রতি অতি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। তাই দিনের বেলা ব্যবহার করলে বিশেষজ্ঞরা উচ্চমাতার এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। মাঝে মাঝে রেটিনল ব্যবহারে সুচ গাঁথার মত ব্যথা অনুভব হতে পারে এবং ত্বকে ফুসকুড়ি(rash) দেখা দিতে পারে ।
যদি বেশি ব্যথা অনুভব হয় সে ক্ষেত্রে রেটিনলের ঘনত্ব কমিয়ে আনতে হবে এবং দ্রুত সার্টিফাইড ডার্মাটোলজিস্ট এর শরণাপন্ন হতে হবে। যদি কারো একজিমা, রোসাচিয়া সহ অন্যান্য চর্মরোগ থেকে থাকে রেটিনল ব্যবহারের ফলে তার আরো নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই এসব চর্মরোগ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া রেটিনল ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রথমদিকে রেটিনল স্কিনে ঠিকভাবে সুট না করলে মুখের বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর ব্রণ উঠতে পারে। তবে নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক এই রাসায়নিক দ্রব্যে নিজেকে মানিয়ে নেয় এবং ব্রণ ও ধীরে ধীরে সেরে যায় ।

প্রেগনেন্সি এবং ব্রেস্ট ফিডিং এ রেটিনলের নেতিবাচক প্রভাব
রেটিনল অথবা ভিটামিন এ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। রেটিনল যেহেতু টেরাটোজেনিক উপাদান তাই প্রেগনেন্সির সময় এই উপাদানটি যদি অধিক মাত্রায় বিশেষত আইসোট্রেটোনিন, ট্রিটিনয়ন এবং অন্যান্য হাইডোজ রেটিনল আকারে ব্যবহৃত করা হয় তাহলে তা সদ্য জন্মানো ফিটাসের বিপুল ক্ষতি করে।
কারণ রেটিনল স্বাভাবিক এমব্রায়নিক ডেভেলপমেন্ট কে বাধা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে প্রথম ট্রাইমিস্টার এ যদি অধিক মাত্রায় রেটিনল সেবন করা হয় তাহলে শিশুর দেহ ঠিকভাবে বিকশিত হতে পারে না। ফলে শিশুটি শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়। প্রেগনেন্সি এবং ব্রেস্টফিডিং এর ক্ষেত্রে রেটিনলের ঝুঁকি বেশি থাকে যদি এই উপাদানটি সেবন করা হয়। রেটিনল ট্যাবলেট এ ক্রিম বা সিরাম থেকে আরো বেশি মাত্রায় ভিটামিন এ থাকে যা পরবর্তীতে রক্তের মাধ্যমে মিশ্রিত হয়ে শিশুর নানাবিধ ক্ষতি করতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে যদি নিয়ন্ত্রিত ভাবে এই উপাদানটি প্রেগনেন্সি এবং ব্রেস্ট ফিডিং এর সময় শুধুমাত্র ক্রিম বা সিরাম আকারে মুখে ব্যবহার করা যায় তাহলে শিশুর প্রতি এটি কম ক্ষতিকারক হতে পারে। তারপরও কোন স্বাস্থ্যঝুকি এরানোর জন্য গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের সঙ্গে অবশ্যই নিজের স্কিন কেয়ার রুটিনে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি পণ্যের ব্যাপারে পরামর্শ নিতে হবে যেন মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ থাকতে পারেন।
রেটিনল এবং ক্যান্সার ঝুঁকি

অনিয়ন্ত্রিত রেটিনল ব্যবহারের যেমন স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে তেমন ক্যান্সার ঝুকির ও সম্ভাবনা আছে। গবেষণায় দেখা গেছে রেটিনয়ক অ্যাসিড এবং রেটিনাইল পালমিটেড যখন সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসে তখন তা স্কিন ক্যান্সার ঘটায়। উচ্চ ঘনমাত্রার রেটিনল যদি নিয়মিত সেবন করা হয় তাহলে পরবর্তীতে তা প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুকিও অধিক মাত্রায় বাড়িয়ে তুলে। তবে রেটিনল ব্যবহারে লিভার বা লাং ক্যান্সারের ঝুঁকি খুব একটা বেশি থাকে না। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রেটিনলের ঘনত্বের মাত্রা বেছে নিতে হবে এবং অল্প পরিমাণে ও অল্প পরিসরে এটি ব্যবহার করতে হবে। তাহলে ঝুঁকি এড়ানো কিছুটা সম্ভব।
রেটিনলের কিছু নেতিবাচক দিক থাকলেও এটি ত্বকের যৌবনতা ধরে রাখার জন্য এবং ত্বককে আরো মসৃণ ও সতেজ করার জন্য খুবই উপকারী একটি স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট। পরিমিত আকারে নিয়মিত যদি এটি ব্যবহার করা হয় তাহলে পরবর্তীকালে এর একটি ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে। তবে শুধুমাত্র রেটিনল ব্যবহার করলে চলবে না এর সঙ্গে দাগ দূরকারী স্পট লাইটার এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে তবেই ভালো করে দেখা যাবে রেটিনলের জাদু।