বর্তমান যুগে মানুষের দৈনন্দিন লাইফস্টাইলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো স্কিন কেয়ার বা ত্বক পরিচর্যা। এককালে ঘরে থাকা প্রাকৃতিক সামগ্রী দিয়ে মানুষ তাদের রূপচর্চা করত। সে কালেও কিছু রাসায়নিক স্কিন কেয়ার পণ্য বাজারে পাওয়া গেলেও তা সহজ লোভ্য ছিল না এবং শুধুমাত্র উচ্চ শ্রেণীর মানুষদের পর্যন্তই সীমিত ছিল। তবে এখন যুগ অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে এবং তার সঙ্গে স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টসের মধ্যেও বিপুল পরিবর্তন এসেছে। অল্প দামে ভালো মানের স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট এখন প্রসাধনির দোকানগুলোতে বেশ সহজলভ্য।
তবে এত এত স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট এর মাঝে নিজের ত্বক অনুযায়ী কোন প্রোডাক্টটি বেছে নিবেন তাই হলো বিরাট সমস্যা। বাংলাদেশের স্কিন টাইপ অনুযায়ী বেশিরভাগ নারী পুরুষের মধ্যেই বয়সের সাথে সাথে মুখে অসংখ্য গর্ত বা ফেস পোর্স হতে থাকে। ফলে এসব উন্মুক্ত ফেস পোর্স এর কারণে মুখে ব্রণ এবং অন্যান্য চর্ম রোগের সৃষ্টি হয়। এই সবকিছু কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সবচেয়ে ভালো স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট হলো নায়াসিনামাইড ১০%+ জিংক ১%।

নায়াসিনেমাইড ও জিংক কি?
- নায়াসিনেমাইড : নায়াসিনেমাইড হলো ভিটামিন বি৩ এর একটি ফরম যা নিকোটিনামাইড হিসেবেও সুপরিচিত। এটি দেহের কোষ গঠনে সাহায্য করে, ইনফ্লামেশন (ফুলে যাওয়া) কমায়, স্কিন ব্যারিয়ার ফাংশনকে ভালো করে এবং হাইপারপিগমেন্টেশন কমাতে সাহায্য করে। স্কিন কেয়ার এর ক্ষেত্রে এটি একনে, সূক্ষ্ম বলিরেখা এবং স্কিন টেক্সচারকে ভালো করতে সাহায্য করে। এটি যে কোন স্কিন টেক্সচারের জন্যই ভালো কাজ করে।
- জিংক: জিংক একটি মিনারেল যুক্ত রাসায়নিক উপাদান যা দেহের বিভিন্ন কার্যকারিতার জন্য অল্প পরিমাণে দরকার হয়। এটি ইমিউনিট, ক্ষতস্থান পূরণ এবং কোষ বিভাজনে সাহায্য কর। এটিতে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য আছে যার জন্য ত্বকের কোন জায়গা ফুলে গেলে তা এই উপাদানটি আবারও পূর্বাবস্থায় ফিরে আনতে সাহায্য করে। এটি মুখের। ব্রণ সারাতেও খুবই উপকারী। জিংকের একটি উপাদান জিংক অক্সাইড বিভিন্ন সানস্ক্রিনে ব্যবহৃত হয় কারণ এটিতে রয়েছে UV প্রটেকশনের বৈশিষ্ট্য।
নায়াসিনেমাইড এবং জিংক একত্র করে বিভিন্ন স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে ফর্মুলেশন হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এটি ত্বকের জন্য খুবই উপকারী একটি কম্বিনেশন। এই দুই উপাদান যদি কোন ক্সিন কেয়ার প্রোডাক্টে থাকে তাহলে এই উপাদান গুলি আর আলাদা আলাদা ভাবে ব্যবহার করতে হয় না কেননা সে ক্ষেত্রে একটি প্রোডাক্টটেই দুটো উপাদানের গুণাবলী পাওয়া যায়।
নায়াসিনেমাইড ও জিংক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টে কেমন টেক্সচারে পাওয়া যায়?
ফর্মুলেশন এবং প্রোডাক্ট টাইপ এর উপর ভিত্তি করে নাইসিনেমাইড ও জিংক বিভিন্ন টেক্সচারের হতে পারে। নিম্নে কিছু কমন টেক্সচারের প্রোডাক্ট সম্পর্কে বলা হলো:
- সিরাম: নায়াসিনেমাইড এবং জিংক সিরাম আকারে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। সিরাম হালকা ওজনের হওয়ায় এটি ত্বকে খুবই দ্রুত এবজর্ভ হয়ে যায়। তাই নায়াসিনেমাইড ও জিংক সিরাম আকারেই স্কিন কেয়ার লাভারদের কাছে সবচাইতে জনপ্রিয়। নায়াসিনেমাইড ও জিংক যুক্ত সিরামের মধ্যে কিছু জনপ্রিয় ব্রান্ড হলো The Ordinary 10% Niacinamide+ 1%Zinc, Revolution, Lillac প্রমুখ।
- ক্রিম এবং লোশন : নায়াসিনেমাইড ও জিংক, ক্রিম এবং লোশন হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন মশ্চারাইজার ক্রিমে এই উপাদানটি ব্যবহার করা হয়। ফলে ত্বক হাইড্রেটিং থাকে এবং চেহারায় একটি গ্লোয়ী ভাব আসে। চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে বিভিন্ন আই ক্রিমে নায়াসিনেমাইড ও জিংক ব্যবহৃত করা হয়।
- জেল : নায়াসিনেমাইড এবং জিংক জেল আকারেও ব্যবহার করে থাকা হয়। এই জেলগুলো নন গৃসি হওয়ায় ত্বকে দ্রুত শোষণ হয়ে যায়। অয়েলি এবং কম্বিনেশন স্কিনার জন্য এই টেক্সচারটি উপকারী।
- সানস্ক্রিন : জিংক অক্সাইড এর ক্ষতিকারক UV রশ্মি থেকে রক্ষা করার বৈশিষ্ট্য থাকায় এটি বিভিন্ন মিনারেল যুক্ত সানস্ক্রিনেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই সানস্ক্রিন গুলো ক্রিম এবং লোশন এর টেক্সচারে পাওয়া যেতে পারে।
- ক্লিনজার : নায়াসিনেমাইড ও জিংক বিভিন্ন ক্লিনজারেও ত্বকের জন্য আরো বেশি কার্যকারী করতে ব্যবহার করা হয়। ক্লিনজার জেল, ক্রিম এবং ফোমিং টেক্সচারে পাওয়া যেতে পারে।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে বর্তমানে সিরামটাই সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় এবং নায়াসিনেমাইড + জিংক ফর্মুলেশন সিরাম আকারেই ভালো কাজ করে।

কি ধরনের স্কিনের জন্য উপকারী?
নায়াসিনেমাইড এবং জিংক এমন একটি স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট যা সকল স্কিন টাইপকেই বিভিন্ন কারণে সুট করে। নিম্নে কোন স্কিনে কিভাবে এই প্রোডাক্টটি প্রভাব ফেলে থাকে তা বলা হলো :
- তৈলাক্ত বা একনে প্রোণ ত্বক : নায়াসিনেমাইড এবং জিংক ত্বকে অয়েল প্রোডাকশন নিয়ন্ত্রণ করে। এটিতে আন্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্যও আছে তাই এটি ব্রণ কমাতেও সাহায্য করে এবং মুখের অতিরিক্ত লাল ভাব কে কমিয়ে আনে।
- কম্বিনেশন স্কিন: যাদের ত্বক খুব একটা তৈলাক্তও তো নয় আবার খুব একটা শুষ্কও নয় তাদের স্কিনকে কম্বিনেশন স্কিন বলে। এই প্রোডাক্টটি কম্বিনেশন স্কিনে অয়েল প্রোডাকশন এবং অতিরিক্ত ড্রাইনেস কে ব্যালেন্স রাখতে সাহায্য করে।
- সংবেদনশীল ত্বক: যাদের সংবেদনশীল ত্বক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করার সময় তাদের সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হয়। তবে নায়াসিনেমাইড এবং জিংকে আছে কুলিং প্রপার্টি যার কারনে সংবেদনশীল ত্বকেও এটি খুব সুন্দর ভাবে সুট করে।
- এজিং স্কিন: নায়াসিনেমাইড এবং জিংকের রয়েছে অ্যান্টি এজিং প্রপার্টি যার কারনে বার্ধক্য জনিত ত্বকে এটি সূক্ষ্ম রেখা এবং বলিরেখা দূর করতে সহায়তা করে এবং ত্বকের প্রাকৃতিক ইলাস্টিসিটি ধরে রাখতে সহায়তা করে।
- নরমাল স্কিন : এ ধরনের স্কিনকে হেলদি রাখতে এবং অয়েল প্রোডাকশন ও ড্রাইনেস কে ব্যালেন্স রাখতে নায়াসিনেমাইড এবং জিংক অত্যন্ত কার্যকরী।
কোন বয়সে নায়াসিনেমাইড এবং জিংক ব্যবহার করা যাবে?
সাধারণত নায়াসিনেমাইড এবং জিংক ব্যবহারের কোন নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই। তারপরও বিশেষজ্ঞদের মতে টিনেজ অর্থাৎ ১৩ বছরের উপরের থেকে নায়াসিনেমাইড এবং জিংক ত্বকে ব্যবহার করা উপযোগী।
- ১৩-২০ বয়স : এই সময়টাকে টিনেজ বলা হয়। বয়সন্ধিকালে দেখে নানা ধরনের হরমোনাল চেঞ্জ হতে থাকে। তাই এ সময় মুখে অতিরিক্ত ব্রণ উঠার একটি আশঙ্কা থাকে। এ সময় নায়াসিনেমাইড এবং জিংক যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে ব্রণ উঠা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আসে।
- ২০-৩০ বয়স : যৌবনকালে মানুষ তাদের জীবনকালের শ্রেষ্ঠ ত্বকের অধিকারী হয়ে থাকে। তারপরও এ সময় অতিরিক্ত একনে,
মুখে গর্ত, ড্রাইনেস বা অতিরিক্ত অয়েলি ভাব দেখা যেতে পারে। তাই নাইসিনেমাইড এবং জিংক ব্যবহার করলে এ সমস্যাগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে।
- ৩০ এবং তার উপরে : এই সময়কালে মানুষের মুখে ধীরে ধীরে বার্ধক্যের ছাপ আসতে থাকে। মুখে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বলিরেখা দেখা যায়। নায়াসিনেমাইড এবং জিংক এই বলিরেখাগুলোকে কমাতে সাহায্য করে এবং স্কিনকে আরো টাইট এবং মসৃণ করে তোলে।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?
নায়াসিনেমাইড এবং জিংক কিভাবে ব্যবহার করবেন তার স্টেপ বাই স্টেপ বিবরণ নিচে দেওয়া হল :
- মুখ পরিষ্কার করা: প্রথমেই একটি ভালো ক্লিনজার দিয়ে এবং পরিষ্কার পানির সাহায্যে মুখ ভালো করে ক্লিন করে নিতে হবে এবং পরিষ্কার টাওয়াল এর মাধ্যমে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হবে।
- টোনার ব্যবহার (অপশনাল) : যদি ডেইলি স্কিন কেয়ার রুটিনে টোনার ব্যবহার করে থাকেন তাহলে এ পর্যায়ে ক্লিনজারের পর মুখে টোনার মেখে নিবেন। চাইলে এ পর্যায়েটি ক্সিপ করতে পারেন।
- নায়াসিনেমাইড এবং জিংক যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করা : এ পর্যায়ে নায়াসিনেমাইড এবং জিংক যুক্ত প্রডাক্টটি অল্প পরিমাণে পাতলা করে সারা মুখে মেখে নিন। প্রোডাক্টটি সারা মুখে এবজার্ভ বা শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হব।
- ময়শ্চারাইজার: প্রোডাক্টটি মুখে ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে অতিরিক্ত শুষ্কতা দূর করার জন্য ভালোভাবে মশ্চারাইজার লাগাতে হবে যেন মুখের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ভালোভাবে লক হয়ে যায়।
- সানস্ক্রিম : যদি দিনের বেলা ব্যবহার করে থাকেন তাহলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ইউজ করতে হবে না হলে প্রোডাক্টের ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে না।
উল্লেখ্য যে নায়াসিনেমাইড এবং জিংক যুক্ত যেকোনো প্রডাক্ট সর্বপ্রথমে ত্বকের একটি ছোট অংশে লাগিয়ে প্যাচ টেস্ট করে নিবেন। যদি সে নির্দিষ্ট অংশে প্রডাক্ট ইউজ করার পর জ্বালাপোড়া বা কোন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে একজন সার্টিফাইড ডার্মাটোলজিস্ট এর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েই পরবর্তীতে ব্যবহার করবেন। শুরুতেই অতিরিক্ত ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। ধীরে ধীরে যখন ত্বক অভ্যস্ত হয়ে আসবে তখন আস্তে আস্তে এর পরিমাণ এবং ডোজ উভয়ই চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়ানো যেতে পারে।

কোন প্রোডাক্ট মিক্সড করা যাবে কোন প্রোডাক্ট মিক্স করা যাবে না?
নায়াসিনেমাইড এবং জিংক সাধারণত বহুমুখী কার্যসম্পূর্ণ একটি প্রোডাক্ট। এটি যে কোন প্রোডাক্ট এর সাথে অনায়াসে ইউজ করা যায়। যেমন :
- হ্যালুয়ারনিক এসিড : এই এসিডটি এবং নায়াসিনেমাইড ও জিংক খুবই ভালো একটি কম্বিনেশন। হ্যালুয়ারনিক এসিড সাধারণত মুখের আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়। তাই নায়াসিনেমাইড ও জিংক এর সাথে এই আসিফটির কম্বিনেশন মুখে অনেক ভালো কাজ করে থাকে।
- রেটিনল: এই উপাদানটি সাধারণত খুবই সংবেদনশীল একটি উপাদান। সহজে অন্য কোন উপাদানের সাথে একে মিক্স করা যায় না। তবে নায়াসিনেমাইড এবং জিংক এর সাথে ইউজ করলে মুখে যদি রেটিনল ব্যবহার করায় কোন জ্বালাপোড়া বা মুখে কোথাও ফুলে যায় তাহলে নায়াসিনেমাইড এবং জিংক যুক্ত প্রোডাক্ট সেটি কমাতে সাহায্য করে এবং মুখে আরাম প্রদান কর।
- পেপটাইড : নায়াসিনেমাইড এবং জিংক এর সঙ্গে পেপটাই ব্যবহার করলে মুখের বার্ধক্য জনিত ভাব কমে যায়।
- ময়শ্চারাইজার : এটি প্রতিটি স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট এর সাথেই ব্যবহার করার মত একটি আবশ্যক প্রোডাক্ট। নায়াসিনেমাইড এবং জিংক ও তার ব্যতিক্রম নয়। নায়াসিনেমাইড এবং জিংক যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করার পর যে আদ্র ভাব থাকে ময়শ্চারাইজার তা লক করে রাখতে সাহায্য করে।
যদিও নায়াসিনেমাইড এবং জিংক যুক্ত প্রোডাক্ট সবকিছু সাথে ব্যবহার করা যায় তারপরও কিছু কিছু প্রোডাক্টের সাথে ব্যবহার করার সময় আমাদের একটু সতর্ক থাকতে হবে। যেমন:
- আলফা হাইড্রোক্সিল এসিড এবং বিটা হাইড্রোক্সিল এসিড : গবেষণায় দেখা গেছে এ দুটি এসিডের সঙ্গে নায়াসিনেমাইড এবং জিংক বিক্রিয়া করে ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। তাই দিন ও রাত করে একেক বেলায় এক একটি প্রোডাক্ট ব্যবহার করা যেতে পারে তবে একসাথে ব্যবহারে বিরত থাকতে হবে।
- বেঞ্জোয়েল পারঅক্সাইড : এই উপাদানটি নায়াসিনেমাইড এবং জিংক যুক্ত প্রোডাক্ট এর সাথে ব্যবহার করার নিয়ে কিছু মতবিরোধ আছে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে এই কম্বিনেশন টি ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক আবার কারো মতে এটি ক্ষতি কারক নয়। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে কোন ঝুঁকি না নেওয়া উত্তম বরং দিনের বেলা একটি এবং রাতের বেলায় অন্যটি ব্যবহার করলে ত্বকের কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
- ভিটামিন সি : যদিও নায়াসিনেমাইড এবং জিংক যুক্ত প্রোডাক্ট এর সাথে ভিটামিন সি জাতীয় প্রডাক্ট ব্যবহার করলে খুব একটা ক্ষতি হয় না তারপরও যেহেতু রাসায়নিক বিক্রিয়ার কিছু সম্ভাবনা থেকে থাকে তাই কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এড়ানোর জন্য বিশেষজ্ঞরা বলেন দুটোকে আলাদাভাবে ব্যবহার করতে।

প্রেগনেন্সি এবং ব্রেস্টফিডিং এর সময় কি নায়াসিনেমাইড এবং জিংক যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করা যাবে?
স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট হিসেবে প্রেগনেন্সি এবং ব্রেস্টফিডিং এর সময় নায়াসিনেমাইড এবং জিংক যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহারে কোন স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। তবে এই দুটি উপাদানের সাথে যদি রেটিনয়েড এবং নির্দিষ্ট এসিড জাতীয় উপাদান ও মিশ্রিত থাকে তাহলে তা ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। যে কোন স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ক্রয় করার পূর্বে লেবেল চেক করে নিবেন এবং শিশুর জন্য ক্ষতিকারক এমন কোন উপাদান যদি তাতে মিশ্রিত থাকে তাহলে ওই পণ্যটি ক্রয় করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
নায়াসিনেমাইড এবং জিংক যুক্ত প্রোডাক্টের উপকারিতা
নায়াসিনেমাইড এবং জিংক ত্বকের জন্য একটি চমৎকার কম্বিনেশন। এর উপকারিতা গুলো হল :
- সিবাম প্রোডাকশন কমানো : নায়াসিনেমাইড এবং জিংক যুক্ত প্রোডাক্ট ত্বকের অতিরিক্ত অয়েল প্রোডাকশন কে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তাই তৈলাক্ত হোক বা কম্বিনেশন স্কিন যেকোনো স্কিন টাইপে এটি সহজে সুট করে।
- অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য : নায়াসিনেমাইড এবং জিংক দুটোরই অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যার কারনে ত্বকে কোন জায়গায় ফুলে গেলে বা লাল হয়ে গেলে এটি ওই জায়গাটি সারিয়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
- মুখের পোর্স কমায়: বয়সের সাথে সাথে বেশিরভাগের মুখে অসংখ্য পোর্স বা গর্তের সৃষ্টি হয়। এই ছোট ছোট গর্তগুলো দিয়ে ময়লা ঢুকে এবং অতিরিক্ত তেল মুখের গভীরে গিয়ে জমা হয়। ফলে মুখে একনে এবং ওয়াইট হেড ও ব্ল্যাকহেড সৃষ্টি হয়। নায়াসিনেমাইড এবং জিংক যুক্ত প্রোডাক্ট মুখের এই গর্ত গুলোকে বন্ধ করতে সাহায্য করে।
- ব্রণ দূর করে : মুখের এমন ওপেন পোর্স গুলোকে বন্ধ করে মুখে আরো ব্রণ সৃষ্টি হওয়া থেকে এটি রোধ করে।
- বলিরেখা কমায় : বাড়ন্ত বয়সের সাথে মুখে ধীরে ধীরে বলে রেখাও দেখা দিতে শুরু করে। তবে নিয়মিত নায়াসিনেমাইড এবং জিংক যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে তোকে বলিরেখা কমে আসে এবং স্কিন আরো টাইট এবং মসৃণ হয়ে ওঠে।
- কোলাজেন প্রডাকশন বাড়ায় : কোলাজেন হলো এমন একটি উপাদান যা ত্বকের ইলাস্টিসিটি ধরে রাখে এবং ত্বককে আরো টানটান করে রাখে। তাই নায়াসিনেমাইড এবং জিংক যুক্ত প্রোডাক্ট নিয়মিত ব্যবহার করলে বয়সের সাথে মুখের স্কিন ঝুলে পড়ার কোন আশঙ্কা থাকে না।
- হাইপারপিগমেন্টেশন কমায়: হাইপারপিগমেন্টেশন এর কারণে মুখে অনেক সময় ডার্ক স্পট হতে পারে এবং স্কিন টোন অসম হয়ে যায়। এমন ত্বকে ঠিক করতে নায়াসিনেমাইড এবং জিংক এর জুড়ি নেই। কেননা এর ব্রাইটেনিং এফেক্ট ডার্ক স্পট গুলোকে দ্রুত সারিয়ে তোলে এবং ত্বককে করে তোলে কোমল এবং উজ্জ্বল ।
- স্কিন টেক্সচার ঠিক করা : বাহিরের ধুলাবালি এবং নানা কারণে ত্বকের সঠিক টেক্সচার ঠিক রাখা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় নায়াসিনেমাইড এবং জিংক যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে সহজেই স্কিন টেক্সচার ঠিক করা সম্ভব। কেননা এটি কিন্তু ঠিক করে, কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে এবং তোকে আদ্রতা বজায় রাখে। তাই নিয়মিত ব্যবহারে স্কিন টেক্সচার আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে।

নায়াসিনেমাইড এবং জিংক যুক্ত প্রোডাক্টের অপকারিতা
সকল স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট এর মত নায়াসিনেমাইড এবং জিংক যুক্ত প্রোডাক্টের ও কিছু অপকারিতা রয়েছে
- এলার্জিক রিএকশন : একেকজনের স্কিন টাইপ এক এক রকম। অনেক সময় কোন নির্দিষ্ট স্কিন টাইপে প্রোডাক্টটি সুট না করলে মারাত্মক এলার্জিক রিএকশন হতে পারে। তাই অবশ্যই পূর্বে প্যাচ টেস্ট করে নিতে হবে।
- ত্বকে জ্বালাপোড়া: নায়াসিনেমাইড এবং জিংক যদি ঠিকভাবে ত্বকে মানানসই না হয় তাহলে ত্বকে জ্বালাপোড়া বা হালকা চুলকানিও হতে পারে।
- একনে ব্রেক আউট : নায়াসিনেমাইড এবং জিংক যুক্ত প্রোডাক্ট সাধারণত এক সারাতে খুবই উপযোগী। তারপরও গবেষণায় দেখা গেছে খুবই বিরল ক্ষেত্রে এই প্রোডাক্টটি ত্বকে মানানসই না হলে ব্রেক আউট হতে পারে।
- ফটো সেনসিটিভিটি : অনেক সময় দেখা যায় নায়াসিনেমাইড এবং জিংক এর সাথে রেটিনয়েড বা বিভিন্ন এসিড জাতীয় পদার্থ মিশ্রিত থাকে ফলে সূর্যের আলোর সরাসরি সংস্পর্শে আসলে বিক্রিয়া ঘটতে পারে এবং ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। তাই অবশ্য এমন কোন উপাদান আছে কিনা সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে এবং সূর্যের আলোয় বেরোলেই মুখে সানস্ক্রিন মেখে নিতে হবে।
মনে রাখতে হবে সব স্কিন টাইপ এক রকম নয়। এক এক রকম স্কিন টাইপের একেক রকম চাহিদা রয়েছে। তাই সব সময় যেকোনো রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করার পূর্বে অবশ্যই কোন সার্টিফাইড ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করাটাই উত্তম।